পড়াশোনা করে যে...

পড়াশোনা করে যে...

আপনার কি মনে আছে, ছোটবেলায় টাকা নিয়ে কথা বললে বড়রা কি বলতেন? ‘ছোটদের টাকা ধরা ঠিক না।’, ‘তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।’, ‘টাকার চিন্তা তোমাকে না করলেও চলবে, তুমি পড়াশুনা নিয়ে থাকো।’ – এসব কথা বাবা-মা অথবা অন্য কোনও আত্মীয় নিশ্চই একবার হলেও বলেছে। কিন্তু এই মানসিকতা আমাদের কতটা পিছিয়ে দিয়েছে, তা কি ভেবে দেখেছেন? বিখ্যাত রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বই এর লেখক রবার্ট কিওসাকির গবেষণায় উঠে এসেছে, অভিভাবকরা মুখে টাকাপয়সা নিয়ে ভাবতে ও কথা বলতে মানা করলেও, “পড়তে বসো” এর পেছনে কিন্তু এই ‘টাকা কামাও’ মানসিকতাই কাজ করে। বেশিরভাগ অভিভাবক এবং ছাত্রদের মতে, পড়াশুনার উদ্দেশ্য হলো প্রতিযোগীতামূলক বাজারে নিজেকে যোগ্য প্রমান করা। অন্য কথায়, একটি ভালো চাকরি ও নিরাপদ ভবিষ্য‌ৎই আজ পড়াশুনার মূল উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। তাহলে যারা একাডেমিক পড়াশুনায় ভালো নয়, তাদের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার? সাধারন ধারনা সেটাই। কিন্তু আশেপাশে তাকালে অনেক সময়েই ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। যত মেধাবী ছাত্র ছাত্রী প্রতি বছর বের হয়, সেই পরিমান কাজ বাজারে নেই। তাই অনেক ভালো ফলাফল করা ডিগ্রিধারী কাঙ্খিত চাকরি না পেয়ে সময়েই হতাশ হয়ে পড়ে। অনেকে নিজের বিষয়েকাজ করতে না পেরে অন্য ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করে। আমাদের বাংলাদেশে এই চিত্রটা খুবই সাধারন। অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল পাশ করা শিক্ষার্থী বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে চাকরি করে, ব্যাংকের মত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাউন্টারে আজকাল মানবিক বা বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্রদের দেখা যায়। যে কোনও সরকারি পদে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেলে একটি পদের জন্য হাজার হাজার এমনকি লাখ পরিমান চাকরি প্রার্থীর আবেদন জমা পড়ে। কোনও রকমে যদি একটি প্রতিষ্ঠানে কেউ ঢুকতে পারে তবে তাকে বহুদিন ধরে নামে মাত্র বেতনে অমানুষিক পরিশ্রম করে যেতে হয়। এরপর অভিজ্ঞতা অর্জন করে কোনও এক সময়ে কাঙ্খিত পদ বা বেতনের দেখা পেলেও, সে পর্যন্ত পৌঁছাতে গিয়ে অনেকেরই চুলে পাক ধরে যায়। অন্যদিকে পেছনের সারির অনেকেই নিজের চেষ্টায় অনেক ভালো জায়গায় চলে যায়, যা কেউ ভাবতেও পারেনি। এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে? জীবনে সফল হতে ‘ভালো শিক্ষার’ চেয়ে ‘সঠিক শিক্ষা’ অনেক বেশি জরুরী। কিন্তু বেশিরভাগ অভিভাবক আর ছাত্রছাত্রী এই হিসাব মেলাতে পারে না। অবশ্য এটা তাদের দোষ নয়। বহুদিন ধরেই সমাজে এই চর্চা চলে আসছে। যদি ভাবেন, এই অবস্থা শুধুমাত্র আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেই, তাহলে ভুল হবে। অনেক উন্নত দেশের মানুষও এই মানসিকতায় আটকে আছে। সমস্যার উ‌ৎস ও সমাধান: কেন অনেক ভালো ছাত্র কর্মজীবনে সফল হতে পারে না? আর কেনই বা অনেক পেছনের সারির ছাত্র অভাবনীয় সাফল্য পায়? আমাদের মানসিকতা আর শিক্ষাব্যবস্থাই এসব সমস্যার প্রধান কারণ। বর্তমানে প্র্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিটি ছাত্রকেই প্রথম হওয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। কিন্তু সবার পক্ষে লেখাপড়ায় প্রথম হওয়া অসম্ভব। তার ওপর তাদেরকে অর্থ ও জীবন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোনও রকমের শিক্ষা দেয়া হয় না, যা সত্যিকার জীবনে কাজে লাগে। ইউরোপ আমেরিকায় ছেলেমেয়েরা ১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন ছোট ছোট পার্ট টাইম জব করে নিজের খরচ নিজেই চালায়। ফলে অর্থ আয় ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাদের একটি ভালো অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু আমাদের এদিকে এটাকে ‘অসম্মানজনক’ হিসেবে ধরা হয়। এর ফলে লেখাপড়া শেষ করে আমাদের ছেলেমেয়েদের সবকিছু আবার প্রথম থেকে শিখতে হয়। – আর এই কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা ক্লাসের টপার হয়, বাস্তব জীবনে তারা সাধারন অথবা একদম পেছনের সারির ছাত্রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য হয়।। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে দেখা যায় ক্লাসের নিচুসারির ছাত্ররাই প্রথম শ্রেণীর ছাত্রদের ‘বস’ হয়ে বসে আছে। তবে হ্যাঁ, আপনি ক্লাসের টপার না হয়েও জীবনে টপার হয়ে উঠতে পারেন। হয়তো আপনার ক্লাসের কোনও টপারই আপনার কোম্পানীতে বেতনভোগী হয়ে কাজ করবে। বর্তমানে সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে এই অবস্থার পেছনে ৩টি প্রধান কারণ রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক এই কারণ ও সমাধানগুলো। ১. ব্যর্থতার ভয়: টপাররা একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ্বল জীবন কাটালেও মনে রাখার মত কোনও অসাধারন কিছু করে দেখাতে পারে না। আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মাথায় একটি জিনিস খুব ভালো করে ঢুকিয়ে দেয়: “ফেল করা যাবে না।” একজন ছাত্র যদি ফেল করে, তাকে পরের ক্লাসে ওঠানো তো হবেই না, সেই সাথে তাকে তার শিক্ষক ও অভিভাবকরা বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করে তার জীবনকে রীতিমত অসহ্য করে তুলবে। একজন ছাত্র যদি অসুস্থ থাকার কারণেও কোনও ক্লাসে ফেল করে, তবুও সবাই তার দিকে এমন ভাবে তাকায়, যেন সে বিরাট একটি অপরাধ করে ফেলেছে। আর যেসব ছাত্রছাত্রী ক্লাসের প্রথম সারির? – তাদের অবস্থা আরও করুণ! এমনও অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক আছেন যাঁরা গনিতে ১০০ তে ৯৯ পেলেও খুশি হন না। যেন একটি নম্বর কম পাওয়াও ফেল করার সমান। এই পরিবেশে থাকতে থাকতে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে একটি আইডিয়া তৈরী হয় যে, সে যদি একটি বিষয়ে ফেল করে অথবা কম নম্বর পায়, তবে তার জীবনই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাদের পড়াশুনার উদ্দেশ্যই হয়ে পড়ে ব্যর্থতা থেকে বাঁচা। এই চাপের মাঝে পড়ে তারা অন্যদের সাথে একটি অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নামতে বাধ্য হয়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে নিজেদেরর নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে। নতুন কিছু শেখা ও শেখার আনন্দের চেয়ে নিরাপত্তাই জরুরী হয়ে ওঠে। এই নিরাপত্তা খুঁজতে গিয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়। সব ব্যাপারে সবচেয়ে নিরাপদ পথটিই তারা বেছে নিতে চায়। জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা খোঁজা। কাজেই তারা চায় যেভাবেই হোক, ভালো ফলাফল করে একটি নিশ্চিত ও ভালো বেতনের চাকরি জুটিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেয়া। অন্যদিকে সেই একই সমালোচনা, ও উপহাসের কারণে অনেক মধ্যম ও নিচের সারির ছাত্রছাত্রী বুঝে যায়, সাধারন শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশুনা করে তারা বেশিদূর এগুতে পারবে না। তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, তাদের দিয়ে জীবনে কিছু হবে না – কারণ তারা পড়াশুনায় ভালো নয়। প্রথম দিকে এসব কথায় হতাশ হলেও, মানুষের টিঁকে থাকার প্রবৃত্তির (survival instinct) ফলে তারা ভাবতে শেখে,যদি বড় কিছু করতে হয় তবে তাদের এমন কিছু করতে হবে যা অন্যরা করেনি। তারা জানে যে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের একাডেমিক ফলাফল দেখে তাদের কাজে নেবে না, কাজেই নিজের ভবিষ্যৎ তাদের নিজেদেরই গড়ে নিতে হবে। ক্লাসে ব্যর্থ হতে হতে তাদের সহ্য ক্ষমতা বেড়ে যায় যা তাদের সাহসী করে তোলে। বড় হওয়ার অন্যরকম পথ ভাবতে ভাবতে তাদের চিন্তা ধারালো হয়। অনেক কিছু করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হতে তারা এক সময়ে এমন সফল হয়, অন্যরা যা কোনওদিন ভাবতেও পারেনি। ব্যর্থতার ভয় না থাকায় তারা বারবার ব্যর্থ হলেও, নতুন উদ্যমে পরিকল্পনা সাজিয়ে আবার কাজে নেমে পড়ে। সারাজীবন সমালোচনা শুনে, দেখার মত কিছু করার একটা ক্ষুধা সব সময়ে তাদের মধ্যে থাকে। সেই কারণেই তারা সব চ্যালেঞ্জকে জয় করে একটা সময়ে ক্লাসের টপারদের বস হয়ে ওঠে। সব ব্যর্থ ছাত্রই এক সময়ে বিরাট সফল হয়, অথবা সব টপারই এক সময়ে গিয়ে কোনও বড় প্রতিষ্ঠানের উচ্চবেতনভোগী চাকরে পরিনত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্তারা পড়াশুনায় বলার মত কোনও ফলাফল করেননি। পড়াশুনায় ভালো না হলেই যে একজন মেধাবী নয়, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। রবীন্দ্রনাথ, স্টিভ জবস – এঁরা ছাত্র হিসেবে চরম ব্যর্থ হয়েও পিএইচডির বিষয়ে পরিনত হয়েছেন তবে, এখানে বলা হচ্ছে না যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষার্থীদের ফেল করতে উ‌ৎসাহ দেয়া উচিৎ; কিন্তু ফেল করলেই জীবন ব্যর্থ – এই মনোভাব চালু থাকলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। একজন টপারও যখন শুধুমাত্র ফেল করা এড়ানোর জন্য পড়াশুনা করে, তখন বাস্তব জীবনে সেই জ্ঞান সে কাজে লাগাতে পারে না। একজন ছাত্রকে যদি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করার পর বকাঝকার বদলে ভালোমত বোঝানো যায়, এবং তাকে যদি ভাবতে বলা হয় কি করলে সে এই ব্যর্থতা কাটাতে পারবে, তবে সে নতুন উদ্যমে আবার পড়াশুনা শুরু করবে। হয়তো এই উদ্যমের ফলে সে সত্যিকার জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং পরীক্ষার ফলাফলও ভালো হবে। পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল একজন কতটা শিখেছে তা বোঝার জন্য। যদি দেখা যেতো সে যথেষ্ঠ শেখেনি, তবে আবার তাকে সেই শিক্ষাগুলো দেয়া হত। তখন জ্ঞান অর্জনই ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। জীবনের ব্যর্থতা বা সফলতা এর ওপরে সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করত না। অর্থ আয়ের উপায় হিসেবে শিক্ষা ও জ্ঞান ব্যবহার হলে জ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য কখনওই পূরণ হবে না। কাজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্যসব বিষয়ের পাশাপাশি, অর্থ উপার্জনের আলাদা একটি বিষয় থাকা উচিৎ যাতে করে শিক্ষার্থীরা একটির সাথে আরেকটিকে গুলিয়ে না ফেলে। এর ফলে তারা শুধু ব্যর্থতা এড়ানোর ভয়ে পড়াশুনা না করে, বরং শিক্ষাকে জীবনে সফল হওয়ার একটি শক্তি ও সাহসের উৎস হিসেবে দেখবে। ২. অবিচার: আলবার্ট আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন জগতের সবাই জিনিয়াস, কিন্তু আপনি যদি একটি মাছকে তার গাছে ওঠার দক্ষতা দিয়ে বিচার করেন তাহলে তো মাছটিকে বোকাই মনে হবে। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেকটা সেরকম। আলাদা আলাদা প্রতিভা ও যোগ্যতার শিক্ষার্থীদের একই মাপকাঠিতে বিচার করা হয়। একে কোনওভাবেই সুবিচার বলা যায় না। এটা এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে একটি মাছ ও একটি বাঁদরকে তাদের গাছে ওঠার যোগ্যতার ভিত্তিতে নম্বর দেয়া হয়। একজন শিক্ষার্থীকে তার শিশু বয়স থেকেই শেখানো হচ্ছে যে, পরীক্ষায় ভালো ফল করাই একজন ছাত্রের একমাত্র যোগ্যতা হওয়া উচিৎ। অন্যান্য ক্ষেত্রে তার প্রতিভা থাকলেও সেগুলোকে মূল্য না দিয়ে তাকে জোর করে এমন জিনিস গেলানো হচ্ছে যাতে তার কোনও আগ্রহ নেই। গনিতে সবার মাথা ভালো হবে, এমন কোনও কথা নেই। যে ছাত্র গনিতে ভালো নয়, অথবা সেই বিষয়ে যার আগ্রহ নেই, সে দেখা যাচ্ছে ছবি আঁকা বা সৃষ্টিশীল লেখালেখিতে দারুন। কিন্তু সেগুলোকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে তাকে সারাদিন গনিত নিয়ে পড়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর ফলে তার সহজাত প্রতিভাও হারিয়ে যাচ্ছে। একটা সময়ে নিজের ওপর সে হতাশ হয়ে পড়ছে। তবে বর্তমানে অনেকেই এই ব্যবস্থার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছেন ও কথা বলছেন। তবে এখানেও আমরা একটি বড় ভুল করছি, আর তা হলো, আমরা একতরফা ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দোষ দিচ্ছি।পরিবর্তনের শুরুটা আসলে ঘর থেকেই হওয়া উচি‌ৎ একটি শিশুর সহজাত প্রতিভা ও যোগ্যতা, এবং তার আগ্রহের বিষয়কে যদি বাবা-মা প্রাধান্য দেন তাহলে সে তার নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। এর ফলে শুধুমাত্র স্কুলের ফলাফলের ওপর ভিত্তি নিজেকে সফল করার ধারনা বদলে যাবে।।নিজের অন্যান্য প্রতিভা কাজে লাগিয়ে সফল হওয়ার আত্মবিশ্বাসও তার মাঝে গড়ে উঠবে। ৩.অন্যের কথায় নিজেকে বিচার করা: তৃতীয় যে কারণে বেশিরভাগ টপার জীবনে অসাধারন কিছু করতে পারে না, তা হলো তারা সারাজীবন অন্যের চোখে নিজেকে ভালো ছাত্র করে রাখার চেষ্টা করে। তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে ওঠে অন্যের চোখে – বিশেষ করে আত্মীয়, প্রতিবেশীদের চোখে ভালো হওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা নিজেরা কিছুই করেনি – কিন্তু সমালোচনা করতে তাদের জুড়ি নেই। এদের চোখে যেটা সাফল্য, অনেক শিক্ষার্থী সেটাকেই সফলতার মাপকাঠি ধরে নিয়ে তাদের পড়াশুনা ও কর্মজীবনের ছক সাজায়, যা তাদের অসাধারন কিছু করার মানসিকতা গড়ে উঠতে দেয় না। অবশ্যই সব ভালো ছাত্রের ক্ষেত্রে একথা খাটে না। এমন অনেকেই আছে যারা নিজের তাগিদেই পড়াশুনায় ভালো করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে যারা একাডেমিক ভাবে খুব বেশি ভালো করতে পারে না, তারা তাদের অনুপ্রেরণা খোঁজে সেইসব মানুষের জীবন থেকে যাঁরা একদম ছোট অবস্থা থেকে নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন। তাঁদের জীবন থেকে উৎসাহীত হয়ে তারা তাঁদের মত হওয়ার চেষ্টা করে। সমাপ্তি: আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও উচিৎ এইসব মানুষদের জীবন থেকে সব শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত হতে উ‌ৎসাহ দেয়া। শুধুমাত্র থিওরি না শিখিয়ে, জীবনে কিভাবে সফল হওয়া যায়, সেই ব্যাপারে ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব। সবাই যে সব বিষয়ে একই রকমের ফলাফল করার যোগ্যতা রাখে – এটা বিশ্বাস করা ভুল। এই বিশ্বাস যতদিন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে থাকবে, ততদিন একজন শিক্ষার্থীর সত্যিকার প্রতিভার বিকাশ হবে না! -সাজিয়া জাহান সিনহা