মুনির হাসান এর মতে যে গুণগুলো ছাড়া আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন না

মুনির হাসান এর মতে যে গুণগুলো ছাড়া আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন না

আমরা অনেকে শুধুমাত্র এই ভেবে উদ্যোক্তা হতে চাই যে, আমরা কর্মক্ষেত্রে স্বাধীন থাকতে চাই। অন্যের অধীনে কাজ না করে বরং নিজেই নিজের বস হতে চাই। এছাড়া অনেকের গোপন বাসনা থাকে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি ও সামাজিক সম্মান অর্জন করার। যদিও কেউই এটি মুখে স্বীকার করতে চান না। সামাজিক উদ্যোক্তা মুনির হাসানের মতে, শুধুমাত্র এই দু’টি ইচ্ছের কারণে কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে এটি কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেন, একজন উদ্যোক্তার অনেক ধরণের গুণ থাকতে হয়। একজন উদ্যোক্তা যিনি অন্যের অধীনে চাকরি না করলেও তার অধীনে একটি টিম কাজ করছে। এই টিমের সকল সদস্যদের ‘পেইন’ নেওয়ার সক্ষমতা তার থাকতে হবে। যে আইডিয়াকে নিয়ে একজন উদ্যোক্তা কাজ করছেন সে আইডিয়ার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল জ্ঞান তার থাকতে হবে। শুধুমাত্র টিমের উপর নির্ভর করে এগোতে চাইলে আপনি বরং একজন দক্ষ ম্যানেজার হতে পারবেন কিন্তু উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।


সামাজিক সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে
মুনির হাসানের বলেন সাধারণত একজন ব্যবসায়ীকেও উদ্যোক্তা বলা যায়। তবে যিনি কোনো সামাজিক সমস্যা খুঁজে বের করে নতুন বিজনেস আইডিয়ার মাধ্যমে তা সমাধানের উদ্যোগ নেন তাকে যথার্থভাবে উদ্যোক্তা বলা হয়ে থাকে।


সঠিক জায়গায় ফোকাস করতে হবে
এমন হতে পারে যে আমরা অনেক রকমের কাজ জানি। তাহলে উদ্যোক্তা হতে গেলে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কোন কাজটা আমরা সব থেকে ভালো ভাবে জানি? যে কাজটি আমরা ভালোভাবে করতে পারবো সেটিকে সামনে রেখে আমাদের এগোতে হবে। একসাথে অনেক উদ্যোগ নিয়ে কখনো সফল হওয়া যায় না। একটি উদ্যোগের পেছনে বেশ কিছুদিন ধরে লেগে থাকতে হবে। প্রথম উদ্যোগটি সফলতার মুখ দেখলে তারপর অন্য উদ্যোগের কথা ভাবা যেতে পারে। কখনো একসাথে দুই নৌকায় পা দেওয়া যাবে না।


দূরদর্শী চিন্তা করতে হবে
উদ্যোক্তা হতে হলে যে কাউকে অবশ্যই দূরদর্শী হতে হবে। মুনির হাসান বলেন, ফাটাফাটি আইডিয়া বলতে কোনো কিছু নেই। প্রতি মুহুর্তে মানুষ হাজার হাজার আইডিয়া জেনারেট করছে। ‌আইডিয়া যত ভালোই হোক, আপনাকে সামনে নিয়ে যাবে আপনার দূরদর্শীতা। আপনি অনেক ভালো প্রডাক্ট তৈরি করলেন, কিন্তু এটা যদি কেউ না কিনে তাহলে আপনি সফল হতে পারবেন না। আপনার মার্কেটিং কৌশল কী হবে সেটিও আপনাকে ভেবে রাখতে হবে।


সমস্যা ‘পাস’ দেওয়া চলবে না
মুনির হাসানের মতে, চ্যালেঞ্জ নিতে পারা একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুণ। যত ধরনের সিচুয়েশন আসবে উদ্যোক্তাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। কোনো চ্যালেঞ্জ বা সমস্যাকে অন্যের কাছে ‘পাস’ দেওয়া যাবে না। যদি কেউ ভাবেন, সব ধরনের এক্সপার্টদের নিজের কোম্পানিতে নিয়ে এসে তাদের দিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করবেন তাতেও খুব একটা লাভ হবে না। বরং আপনার হাউজের কর্মকর্তারা ভাববে আপনি কিছুই পারছেন না বলে সব সমস্যা তাদের কাছে ‘পাস’ করছেন। কাজেই সমস্যা নিজে সমাধান না করে ‘পাস’ দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যাবে না। আগে নিজেকে সমাধান করা শিখতে হবে, তারপর অন্যদের কাছে ‘পাস’ করা যেতে পারে।


যে কোনো সময়ে উদ্যোগ নেওয়ার মানসিকতা
মুনির হাসান বলেন, একজন উদ্যোক্তার যেকোনো বয়সে যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। বাংলাদেশের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা ও এই আলোচনার সঞ্চালক মাহমুদুল হাসান সোহাগের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন সোহাগ তরুণ বয়সে উদ্যোক্তা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমান পঞ্চান্ন বছর বয়সে প্রথম আলো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। KFC এর প্রতিষ্ঠাতা Colonel Sanders পঁয়ষট্টি বছর বয়সে KFC প্রতিষ্ঠা করেন। তারা সকলে ভিন্ন ভিন্ন বয়সে উদ্যোক্তা হয়েও সফল হয়েছেন। তাহলে বুঝতে হবে, উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই।


প্রত্যেকটি সম্পর্ককে ধরে রাখা
সহজ কথায় যাকে বলে নেটওয়ার্কিং। নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে যে যত বেশি এগিয়ে থাকে সে তত বেশি সফল উদ্যোক্তা। মুনির হাসান বলেন, যাদের ভেতর উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তারা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগায়। ভবিষ্যতে সে কোন আইডিয়া নিয়ে কাজ করবে সেটা বিবেচনার বিষয় না। প্রতিটি মুহুর্তে পরিচিত হওয়া নতুন নতুন সব মানুষের সাথে সম্পর্কে সে ধরে রাখে। সম্পর্কগুলোকে এগিয়ে রাখে। পরবর্তীতে সে যে আইডিয়া নিয়েই কাজ করুক, ওই মানুষগুলোর সহযোগিতা সে পায়। মুনির হাসান দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের উদাহরণ দিয়ে বলেন- মতিউর রহমান ১৯৬২-১৯৭০ পর্যন্ত বাম ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সে সময় তিনি ছাত্রসংগঠনের হয়ে একুশের সংকলনের সম্পাদনা করতেন। সে সুবাদে কবি শামসুর রাহমান ও শিল্পী কাইয়ুম হাসান প্রমুখদের সাথে উনার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর মতিউর রহমান অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যান। এসময় তিনি লেখালিখি থেকে দূরে থাকলেও লেখক শিল্পীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতেন। পরবর্তীতে বহুপরে তিনি যখন দৈনিক প্রথম আলোর যাত্রা শুরু করেন তিনি ওই মানুষগুলোর সহযোগিতা তিনি খুব বেশি পেয়েছেন।


সঠিক পার্টনার সিলেকশন
মুনির হাসান বলেন, একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই সঠিক পার্টনার খুঁজে বের করা জানতে হবে। একজন পার্টনারের কাজ সেটাই তোমার যেখানে ঘাটতি আছে, সে সেখানে যোগ করবে। পার্টনার মিটিং করে কখনো ভালো পার্টনার খুঁজে পাওয়া যাবে না। যার সাথে চিন্তার মিল আছে, সে তোমার সবগুলো বিষয় বুঝবে তাকে পার্টনার বানাতে হবে। তবে একটা বিষয় খেয়াল করতে হবে, সব ধরনের চুক্তি লিখিতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা অনেক সময় খুব কাছের বন্ধুকে পার্টনার বানালে ভেবে থাকি লিখিত ডকুমেন্টের প্রয়োজন নেই। এই চিন্তাটি ঠিক নয়।


যে বইগুলো আপনাকে এগিয়ে রাখবে
একজন উদ্যোক্তা মানে একজন লিডার। কথা আছে, Leaders must readers. যিনি নেতৃত্ব দিবেন জানতে হবে সবার থেকে বেশি। দীর্ঘ আলোচনায় মুনির হাসান তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্যোক্তা হতে আগ্রহীদের জন্য কয়েকটি বইয়ের সাজেশন দিয়েছেন। সেগুলো হ লো­-


সূত্রঃ রকমারি ব্লগ