
লোকাল আইকন: বেদে পরিবারের পাশে নাইমুলের "প্রজেক্ট ৬০"
কোভিড-
১৯ এই মহামারীর সময়ে আমাদের অনেকের আয়ই কমে গেছে। অনেকে যুদ্ধ করছেন অভাবের সাথে। কিন্তু
দিনশেষে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই আছে। কিন্তু যাদের মাথা গোঁজার এই ঠাইটুকু নেই? ভবঘুরে
জীবন যাদের? তাদের দিন কিভাবে যাচ্ছে? ভবঘুরে নদীতীরে বসবাসকারী জেলেদের দিকে
মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিতেই যাত্রা শুরু শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এস. এম. নাইমুল
হাসান এর "প্রজেক্ট ৬০"এর।
কোনভাবে ভাত-আলু-ডাল খেয়ে একটা ৪-৫
জনের পরিবারের একবেলা টিকে থাকতে প্রয়োজন ৬০ টাকা, এই ধারণা থেকেই শুরু প্রজেক্ট
৬০। শুরুটা হয়েছিলো ছোট পরিসরে, গ্রামের বাড়ি বরিশালের কাছাকাছি এক বেদে পল্লীর
দুরবস্থার কথা জানতে পেরে তাদের সাহায্য করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত সিনিয়র
জুনিয়রদের নিয়ে আড্ডার আয়োজন করেন নাইমুল। গান-কবিতা-রোবোটিক্স-নাটকের পাঠাভিনয়-স্পোর্টস-অর্গানাইজিং
এগুলো নিয়ে জুম লাইভ আড্ডা। ৬০ টাকা টিকিট মূল্য। টিকিট কাটলে জুমের আইডি পাসওয়ার্ড
দিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে মোট ২১ দিনে ৯ টি লাইভ আড্ডা করা হয়েছে।
তারপর
আস্তে আস্তে বড় হয়েছে কাজের পরিধি। প্রজেক্ট ৬০ এর বিতরণের জন্য ডোনেশনের জন্য কাজ
করা হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। জুম
আড্ডার পর সারা দেশের ১১ টা ইউনিভার্সিটি নিয়ে
আয়োজিত হয়েছে "প্রজেক্ট ৬০ ন্যাশনাল লুডো কম্পিটিশন"। ৩০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি ছিল। সেরা চার
প্রতিযোগীকে ডিজিটাল পোর্ট্রেইট গিফট করা হয়। এঁকে দিয়েছেন চারজন শিল্পী। এভাবে সারা বাংলাদেশ
থেকে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছেন এই আয়োজনের সাথে।
একই সাথে যকাতের টাকা তোলা হয়েছে #Donate_Your_Salami দিয়ে ঈদের দিন সালামীর জন্য আহ্বান
করা হয়েছে।
পরবর্তীতে শাবিপ্রবির আরেকজন উদ্যোক্তার
উদ্যোগ "Digbaazi"(ডিগবাজি)-র সাথে জয়েন্ট ভেনচারের মাধ্যমে KN95 মাস্ক বিক্রির উদ্যোগ নেয়া
হয়েছে।। এই মাস্ক থেকে আসা লাভের বিশাল একটা অংশ Digbaazi ডোনেট করেছে প্রজেক্ট ৬০ কে।
অল্প অল্প
করে বেড়ে ওঠা প্রজেক্ট
৬০ দুইটা সেক্টরে কাজ করছে এখন।
এক: খাদ্য সহায়তা।
দুই: চিকিৎসা সহায়তা।
যোগাযোগ আছে সারা বাংলাদেশের মোট ৮ টি বিভাগের
২০ টি বেদে পল্লীর সাথে। যাদের শারীরিক যেকোন সমস্যায়, তিনজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ
পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সাথে সাথেই। একই সাথে কোভিড-১৯ বিষয়ক যেকোন তথ্য সংগ্রহ করে সাহায্য
করা হচ্ছে তাদেরকে।
এদিকে দেশের ৭ টি বিভাগের ১৬ টি
বেদে পল্লীর মোট ২৫১ টি পরিবারের মাঝে খাবার যোগাতে পেরেছে প্রজেক্ট ৬০।
৯ টি লাইভ আড্ডার টিকিট, ১১ টি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত ন্যাশনাল লুডো টুর্নামেন্টের
রেজিস্ট্রেশন ফি এবং বাকিসব ডোনেশন মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এসেছে প্রায় ২ লাখ টাকা। এই টাকায়,
অসহায় মানুষগুলোর মুখে দুবেলা খাবার তুলে দেয়া হয়েছে। কার্যক্রমের মাঝে টাকা
ফুরিয়ে গেলে চিন্তা করা হয়েছে নতুন কোন পন্থার। এই অর্জনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব
নাইমুল নিজে নিতে নারাজ। তিনি বলেন সবাই তার পাশে থেকে সহায়তা করেছেন বলেই তিনি এই
প্রজেক্ট চালিয়ে নিতে পেরেছেন। নাইমুলের এই "প্রজেক্ট ৬০" এই মহামারীর সময়ে বেদে পরিবারগুলোর পাশে ছায়ার মত থাকুক, ভালো থাকুক।
Fawzia Binta Faruque
District Coordinator-Sylhet, BYOSD & Career Care
Shahjalal University of Science and Technology.