ডিভাইসফিট ডট কম এর জন্ম ও পথ চলা

ডিভাইসফিট ডট কম এর জন্ম ও পথ চলা

ডিভাইসফিট ডট কম, বাংলাদেশের প্রথম গেজেট রিভিউ ওয়েবসাইট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী মো. আহসান উল্লাহ, সাকিব আল মাহমুদ এবং মোবাশশের কালাম নাহিনএর আগে মোবাইল রিভিউ ওয়েবসাইট থাকলেও সব ইলেকট্রিক গেজেট এর জন্য বাংলাদেশী কোন ওয়েবসাইট ছিলো নাফলে আমাদের অনেক সময়ই নির্ভর করতে হতো বিদেশি রিভিউ এর উপর, কিন্তু দেশি বাজার আর বিদেশি বাজারের দামের পার্থক্যের জন্য ঝামেলা পোহাতে হতো প্রচুরকিভাবে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলো?

 "ডিভাইসফিট ডট কম এর প্রতিষ্ঠার পেছনে ঘটনা অনেক পুরানো।  ক্লাস টেনে সম্ভবত, একবার বাজারে একটা ফোন কিনতে গিয়ে দেখলাম ওয়েবসাইটে একটা দাম আর বাস্তবে দাম আরেকটা। আমি ওয়েবসাইট দেখে সে পরিমান টাকাই নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম দামটা ভুল ছিল, অথচ আমি দোকানদারের সাথে কথাকাটাকাটি করছিলামম। জিনিসটা অনেক এম্বেরেসিং ছিল আমার কাছে। বড় হবার পর টেকনোলজির প্রতি অনেক ইন্টারেস্ট বাড়লো। তখনই ভাবলাম অনলাইনে কিছু করা যায় কিনা।" বলছিলেন সি ই ও মো. আহসান উল্লাহ, তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রডিভাইসফিট এর পাশাপাশি কাজ করছেন সাবাশ ফাঁকিবাজ ওয়েবসাইট এর ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে

ফুড এন্ড টি টেকনোলোজির শিক্ষার্থী হয়ে কেন গেজেট রিভিউ ওয়েবসাইট তৈরির কথা মাথায় এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, "একদিন নাহিনের সাথে কথা হচ্ছিল, কিভাবে এই দাম বিভ্রাট কাটানো যায় টেনকনোলজি এবং গেজেটস্ নিয়ে আমাদের দুজনেরই অনেক ইন্টারেস্ট ছিল। সাকিব আর আমি আগে থেকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে একসাথে কাজ করছিলাম। তারপর জিনিসটা সাকিবকে জানালাম। সেও রাজি হলো। সো ফাইনালি ২০১৯এর জুলাই মাসে আমি, সাকিব এবং নাহিন মিলে ডিভাইসফিট প্রতিষ্ঠা করলাম। "

প্রথম প্রথম ব্যাবসা শুরু করতে গেলে নানা বিষয় খেয়াল রাখতে হয়অনেক সময় প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার মধ্যে ব্যবধান তৈরি হয়অর্জনের কথা বলতে গিয়ে আহসান বলেন, "মাদের গোল একটাই ছিল সঠিক এবং আপডেটেড ইনফরমেশন সবার হাতে তুলে দেয়া। সেই লক্ষে আমরা কাজ শুরু করি। শুরু থেকেই এই জিনিসটা মেনে চলায় মানুষের মাঝে আমাদের নিয়ে বিশ্বাস জন্মাতে থাকে। ধীরে ধীরে আমাদের ওয়েবসাইট ব্যাবহারকারী বাড়তে থাকে। ৩মাসের ভেতরেই আমাদের সার্ভারের যে পাওয়ার ছিল, মানুষের চাপে সেটা আমরা অতিক্রম করে যাই। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আমাদের প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে বিভিন্ন মোবাইল ফোন সম্পর্কে আপডেটেড প্রাইস এবং স্পেসিফিকেশন গুলো পেতে থাকে। ৬ মাসের মাথায় আমাদের মাসিক ইউনিক ব্যাবহারকারী ১০০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। যা আমাদের জন্য বিশাল একটা অর্জন।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা যেহেতু প্রত্যেকটা ডাটা ম্যানুয়ালি যাচাই করে অাপলোড করি তাই ডাটা কালেকশন আমাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পার্ট। স্টিল আমরা ম্যানুয়ালি ডাটা কালেকশন করি। কাজের ক্ষেত্রে সঠিক এবং আপটুডেট ডাটা প্রোভাইড করাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনেহয়। তবে আমরা এখন পর্যন্ত সে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে চলেছি।"

অনলাইনে ডাটা চুরি বা সাইবার ক্রাইমের মতো ঘটনা অনেক সময় কাজের গতি কমিয়ে দেয়, নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেএমন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আহসান বলেন,"কাজের বাইরের চ্যালেঞ্জ প্রথম বছর ছিলইনা। কিন্তু আমাদের গ্রোথের সাথে সাথে আমাদের উপর সাইবার এটাকের পরিমান বাড়তে থাকে। আমরা সবচেয়ে পাওয়ারফুল সার্ভার ব্যাবহার করি তাও মাঝে মাঝে এমন সাইবার এটাক হয় যে ওয়েবসাইট চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এই সাইবার এটাক দমনে বর্তমানে আমরা এটাকে ফার্স্ট প্রায়োরিটি হিসাবে নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আগামী ৩মাসের ভেতর আমরা আমাদের প্লাটফর্মটিকে সাইবার এটাকের হাত থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হবো।"

তিনজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ ডিভাইসফিট বর্তমানে ছয় সদস্যের একটি পরিবার, যা করোনা পরবর্তী সময়ে আরও বড় করার স্বপ্ন দেখেন এই তিন উদ্যোক্তামানুষের বিশ্বাস অর্জন এবং সেই বিশ্বাস বাজায় রেখে কাজ করে যাওয়াকেই তারা তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন পরবর্তীতেও তারা এই ধারা বজায় রাখতে চান তাদের এই দল ২০১৯ সালে দুইটি জাতীয় পর্যায়ের স্টার্টআপ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত লড়াই করেছে পরিবারে কারো ব্যবসায়িক পরিবেশ বা পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার পরও তাদের এখন পর্যন্ত সফলতার পিছনে এই দুই প্রতিযোগিতার অবদান অনস্বীকার্যদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা, সেরা মেন্টরদের পরামর্শ এবং সবার সাথে যোগাযোগ তাদের মনোবল এবং ব্যাবসার বিস্তার আরও দৃঢ় করেছে বলেই তারা মনে করেন

এখন ডিভাইসফিট এর যাত্রা প্রায় শুরুর দিকে, জানতে চেয়েছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত তারা এই প্লাটফর্মকে কোথায় দেখতে চায়।"২০২১এর মধ্যে কি কি অর্জন করবো তা সত্যি বলতে এখনো ঠিক করিনি। আমরা এখনো আমাদের প্লাটফর্ম গুছিয়ে নেয়ার দিকে মনোযোগী। তারপর হয়তো ফিউচারের বড় গোল নিয়ে ভাববো। তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমার আশা হচ্ছে ২০২১এর শেষ নাগাদ মাসিক এক মিলিয়ন মানুষকে রিচ করা এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় সব টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে দেশের টেনকনোলজির ট্রেন্ডকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।", জানান আহসান


লেখকঃ ফৌজিয়া বিনতে ফারুক

ডিভেশনাল কোওরডিনেটর- সিলেট,

বায়স্ড এবং ক্যারিয়ার কেয়ার ডট কম।