
উদ্যোক্তা হতে চান ? আপনার জন্য ৮টি প্রয়োজনীয় পরামর্শ
তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে বিজনেস
শুরু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। তরুণ উদ্যোক্তারা যাতে এইসকল চ্যালেঞ্জ আর
বাঁধা টপকিয়ে সাফল্যের পানে ছুটতে পারেন তাই তাদের জন্য নিয়ে আসা হলো আটটি
পরামর্শ।
নতুন একটি ব্যবসা শুরু করা
সবসময়ই কঠিন। নতুন ব্যবসায়ের মালিক হলে আপনাকে সবসময় কাজ করতে হবে বেশি সময় নিয়ে,
কিন্তু দিনশেষে অর্জিত অর্থের পরিমাণ হবে সামান্য। নতুন ব্যবসায়ের উদ্যোগও কখনই
বাঁধামুক্ত নয়, কিন্তু যদি আপনার প্যাশন থাকে সেটার প্রতি, তবে সেটা রূপ নেবে
রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায়। আর তাই আমরা কিছু প্রয়োজনীয় টিপস জড়ো করেছি যা একজন
উদ্যোক্তার কাজে সহায়তা করবে।
১ আপনার হোমওয়ার্ক সম্পাদন করুন
নিশ্চয়ই আপনি ব্যবসায়ে নেমেছেন
কোন না কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে। একজন নবীন উদ্দ্যোক্তা
হিসেবে গভীরভাবে মার্কেট রিসার্চ করে টার্গেট কাস্টমার, প্রোডাক্ট লঞ্চ এবং মার্কেট স্ট্রাটেজির দিকে অন্তর্দৃষ্টি দেয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মার্কেট রিসার্চ
নিম্নে উল্লেখিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে সাহায্য করবে:
• আপনার প্রোডাক্টটা মানুষের কেন প্রয়োজন? কোন সমস্যার সমাধান
করবে এটি?
• এটা কিনবে কারা?
• আপনি আপনার প্রোডাক্টকে কোন পজিশনে রাখতে চাচ্ছেন?
• এটার মূল্য কেমন রাখতে চাচ্ছেন? কোন আয়ের বা শ্রেণীপেশার
মানুষদের আপনি টার্গেট কাস্টমার বানাতে চাচ্ছেন?
• এই প্রোডাক্টের মার্কেটিং কোথায় করবেন?
২ আপনার স্বপ্নের সাথে লেগে
থাকুন
নতুন কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগ
শুরুতে ক্লান্তিকর লাগতে পারে। স্বপ্নের হাল ছেড়ে দেয়া খুবই সহজ। নতুন উদ্যোক্তারা
প্রায়ই নানারকম চ্যালেঞ্জ যেমন: ব্যবসায় ক্ষতি, প্রতিযোগিতা, কাস্টমারদের বাড়তি
চাহিদা ইত্যাদির সম্মুখীন হবেন। দ্রুত ও সহজে অর্থ উপার্জনের চিন্তা দিয়ে কাজ শুরু
করা মোটেও ভালো নয়। আপনি যা বিক্রয় করতে চাইছেন সেটার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে
মানুষের কিছু সময় লাগবে। সুতরাং, ব্যবসায়ে চ্যালেঞ্জ থাকবেই, কিন্তু আপনাকে সবসময়
মনে রাখতে হবে আপনি কেন এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যদি আপনার প্যাশন থাকে কাজটির
প্রতি, তবে ঝোড়ো হাওয়ার দিনেও আপনাকে সেটা আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে।
আরেকটা কথা, কখনোই একটা আইডিয়া
ফেলে রেখে সেটা থেকে অন্য আইডিয়ায় লাফিয়ে পড়বেন না। এই কাজ করতে প্রয়োজন অনেক সময়,
শক্তি এবং সম্পদের। আপনি কি চাচ্ছেন সেটা জানুন এবং সেটার উপর কাজ করতে থাকুন।
৩ শর্ট এবং লং টার্ম চিন্তাভাবনা
করুন
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া অযথা
পরিশ্রম করে লাভ নেই। আপনার বিজনেস প্ল্যান তৈরীর সময় অবশ্যই আপনার গোলগুলোকে
অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলোর উপর ভিত্তি করেই আপনি সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাবেন। আপনি
যদি আপনার কাজের ফলাফলগুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করতে পারেন, তবে একজন তরুণ উদ্যোক্তা
হয়েও আপনি অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন। শর্ট টার্ম গোলগুলো আপনাকে চলার পথে হালকা
থেমে থেমে ফাইনাল গোলের দিকে নিয়ে যাবে। মনে রাখবেন, প্রথম বছরটা একটু জটিল হবেই,
কারণ আপনার ব্যবসায়ের বিভিন্ন জিনিষ বুঝতে সময় লাগবে। শর্ট টার্ম গোলগুলো আপনার
উন্নতিকে ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে যার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসার সাফল্য অর্জন
করতে সক্ষম হবেন।
৪ যোগ্য কর্মী নিয়োগ দিন
ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য একদল
যোগ্য কর্মীর প্রয়োজন। এটা আপনার ব্রান্ডকে বড় করে তুলবে। সবচেয়ে ভালো মেধাবীদেরকে
পেতে চাইলে আপনাকে ভালোভাবে যাচাইবাছাই করতে হবে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রির মোগলদের সাথে
প্রতিযোগিতার বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। কর্মী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি অার দশজনের মতোন
না করে একটু স্বতন্ত্রভাবে করুন। চেষ্টা করুন এমন কিছু যোগান দিতে যা আপনার
টিমওয়ার্কের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করবে।
মনে রাখবেন, ঘন ঘন কর্মী নিয়োগ
একটি ছোট পরিসরের ব্যবসায়ের জন্য লাভজনক হবে না। প্রথম রিক্রুটমেন্টের সময়েই
প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়ে নিন, এতে আপনার খরচ কমে আসবে। ভালো কর্মী পেতে চাইলে সেভাবে
ইনভেস্ট করতে হবে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। কৌশলী পদক্ষেপ নিন এবং মানুষের দিকে
ফোকাস করুন, তবেই কর্মী নিয়োগে সফল হবেন।
কৌশলগতভাবে কর্মী নিয়োগ দিলে
একটা স্ট্রং কোম্পানী কালচার গড়ে উঠবে। কর্মীদের মাঝে সামাজিক বৈচিত্র্য গড়ে
তুলুন।
৫ আশার চেয়ে বেশি পৌছে দিন
আপনি কি চান আপনার প্রতি
বিশ্বস্ত একদল কাস্টমার গড়ে তুলতে? যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনাকে সাধারণের বাইরে এসে
অসাধারণ কিছু করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস হচ্ছে নতুন। আপনি
চেষ্টা করছেন যাতে লোকে আপনার প্রতিদ্বন্দীদের প্রোডাক্ট না কিনে আপনারটা কেনে।
সাফল্য তখনই আসবে যখন লোকে যে ‘এক্সট্রা’ জিনিসটা খুঁজছে সেটা আপনার কাছে থাকবে।
৬ সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন
ব্যবসায়ের শুরুতে সময়ের দিকে
খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরী। নয়তো দিনশেষে সব হারিয়ে ফেলবেন। আশার চেয়ে বেশি পৌছে
দিতে গিয়ে যেন নিজের ক্ষতি না হয়ে যায়। নবীন উদ্যোক্তাদের প্রায়শই এই ভুলগুলো হয়ে
থাকে। তারা সময়টাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না, ব্যবসায়ের জন্য সময়টাকে
সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে না এবং নিজেদের জন্য কিছু সময় রাখার কথা তারা ভুলে যায়।
নিজের বিশ্রামের জন্য সময় প্রয়োজন কারণ এতে করে আপনি নতুন করে চাঙ্গা হবেন এবং
বিজনেসের জন্য নতুন আইডিয়া ও কৌশল বের করতে পারবেন।
৭ ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত আইন ও
বিধি-নিষেধের দিকে খেয়াল রাখুন
আইনের কাজে আপনাকে দক্ষ হতে হবে
এমনটি নয়। এজন্য আইনজীবীরা আছেন। কিন্তু আপনার ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলছে এমন আইন ও
বিধি-নিষেধ, হোক সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, সেগুলো সম্পর্কে খেয়াল রাখুন।
ব্যবসার ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে যে আইনগুলো, সেগুলো সম্পর্কে জানুন। সঠিক ব্যবসা বেছে
নিন এবং যে লাইসেন্সগুলোর দরকার সেগুলোর ব্যবস্থা করুন।
আপনার ব্যবসার সাথে যুক্ত
কর্মীদের উপর যে আইনগুলো প্রভাব ফেলছে সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হোন। উধাহরণ হিসেবে,
আপনার প্রত্যেক কর্মীর অধিকার আছে পারিবারিক ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ছুটি লাভের।
যেহেতু তারা আপনার অধীনে কর্মরত, তাই তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বও আপনার কাঁধে।
সুতরাং দূর্ঘটনাসংক্রান্ত বিষয়ের জন্য ইন্সুরেন্স করে রাখতে হবে।
আইনের আরেকটা বড় অংশ হচ্ছে
ট্যাক্সকেন্দ্রিক। এদিকটায় আপনাকে গভীর নজর দিতে হবে। আপনার ব্যবসার উপর ধার্যকৃত
ট্যাক্সের দিকে খেয়াল রাখুন। মোটকথা, আপনার ব্যবসার জন্য প্রযোজ্য বিধিবিধানগুলো
জানুন এবং ব্যয়বহুল কিন্তু লিগ্যাল ইস্যুগুলো এড়িয়ে চলুন যাতে আপনার ব্যবসার ক্ষতি
না হয়।
৮ শিখুন এবং গ্রো করুন
বিশ্বের সেরা উদ্যোক্তাদের
প্রত্যেকেই ভুল থেকে শিখেই বড় হয়েছেন। অন্যভাবে বললে, ভুল থেকে শেখাই সাফল্যেকে
কাছে নিয়ে আসে। ভুলত্রুটি এবং অভিযোগই আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের ঘাটতির দিকে
আপনাকে নজর দিতে সাহায্য করে। এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিন এবং আপনার কাস্টমারদের মতামত
গ্রহণ করুন। কাস্টমারদের জেনুইন মতামত থেকে যা শিখবেন সেটাই আপনার বিজনেসকে আরো
উন্নত ও মজবুত করে তুলবে।
শেষ কথা
স্টিভ জবসের একটা উক্তি আছে,
“যদি ভালোভাবে খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন সকল সাফল্যের গল্পই বেশ বড়।” আমরা শুধু
সাফল্যটা অর্জন করার পর সেটা চোখে দেখি৷ সুতরাং, হাল ছাড়বেন না। প্যাশন ও স্বপ্নের
পেছনে লেগে থাকুন। স্মার্ট ও হার্ড, দুভাবেই কাজ চালিয়ে যান।
আনুবাদ
সোয়াদ রহমান, যশোর