যে ৭ টি টিপস আপনাকে সব সময় সুস্থ এবং ফিট থাকতে সাহায্য করবে

যে ৭ টি টিপস আপনাকে সব সময় সুস্থ এবং ফিট থাকতে সাহায্য করবে

সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল-এই প্রবাদ বাক্যের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। আজকের ডিজিটাল শতাব্দীতে এসে আমাদের জীবন গতি পেয়েছে অনেক কিন্তু প্রবল গতিতে ছুটতে ছুটতে আমরা হারিয়ে ফেলছি সুস্থ থাকার প্রেরণা। অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং আমাদের ব্যস্ত লাইফস্টাইলের কারণে শারীরিক পরিশ্রম থেকে আমরা দিন দিন অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। পাশাপাশি অনেকেরই ব্যায়াম করার প্রতি চরম অনীহা কাজ করে আর এটার জন্য আমরা দায়ী করে থাকি আমাদের কর্মব্যস্ততাকে। কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে অনেক মানুষই সুস্থ থাকাকে, সঠিক ডায়েট এবং ব্যায়াম করাকে তাদের লাইফস্টাইলের একটা অংশ হিসেবে গ্রহন করছে। কয়েকটা সহজ নিয়ম পালন করলে আমরা নিয়মিত ব্যায়ামকে আমাদের ব্যস্ত জীবনযাপনের একটা অংশে পরিণত করে ফেলতে পারি। ব্যস্ত জীবনে ব্যায়াম/শারীরিক পরিশ্রম নিয়ে আমাদের আজকের পর্ব। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুস্থ থাকার টিপস ।


১. ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস তৈরি করা

সফল ব্যক্তিদের জীবনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাঁরা প্রায় সবাই সূর্য উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছেন। আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে অফিসে/কাজে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে যাওয়া। ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস তৈরি করলে আমরা দিনে কয়েক ঘন্টা সময় কাজের জন্য অতিরিক্ত পাবো। এই সময়টার একটা অংশে আমরা খুব সহজেই আমাদের ব্যায়াম সেরে নিতে পারি।


২. প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন 

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাইরে ৩০ মিনিট হাঁটাচলা করুন। তাহলে সকালের নির্মল বাতাস আপনার মনকে রাখবে সতেজ এবং প্রাণচঞ্চল । যেটা আপনার  সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততাকে করবে প্রাণবন্ত , এবং কাজে আসবে নতুন গতি । তাই সকালে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।  



৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন 

আমরা আমাদের দৈনিক রুটিন প্রস্তুত করার সময় শুধুমাত্র ৯টা-৫টা অফিস করাকেই মাথায় রেখে রুটিন তৈরি করে থাকি। কিন্তু আমাদের জীবিকার পাশাপাশি জীবনের দৈনন্দিন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনেকেরই মাথায় থাকে না। অথচ একটু চেষ্টা করলেই ব্যায়ামের জন্য সপ্তাহে ৪-৫ দিন এক ঘন্টা করে সময় বের করা খুব একটা দুঃসাধ্য কিছু না। একটু কষ্ট করে সপ্তাহে ৪-৫ ঘন্টা ব্যায়ামের জন্য বরাদ্দ করলে ভয়াবহ অনেক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অনেকগুলো ভয়াবহ রোগের হাত থেকে আমরা যেমন নিরাপদ থাকতে পারি তেমনি আমাদের শারীরিক সক্ষমতা এবং এনার্জি লেভেলও অনেক বৃদ্ধি পাবে। সঠিক রুটিন পালন করে চললে আমাদের অফিস, ব্যক্তিগত-পারিবারিক কাজ এবং দৈনন্দিন অন্যান্য কাজেও নতুন করে গতি সঞ্চার হবে।




৪. অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট না করা

ব্যস্ত যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করার সুযোগ খুবই কম। আমরা অনেকেই আড্ডা, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির পিছনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক সময় ব্যয় করে ফেলি। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কারনে আমাদের অনেকের ঘুমের অভ্যাসেও অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা অপ্রয়োজনীয় খাতগুলো থেকে সময় বাচিয়ে সহজেই তা ফিটনেসের পিছনে দিতে পারি। ফিটনেসের পাশাপাশি আরও অনেক ভালো/সৃষ্টিশীল কাজেও সময় ব্যয় করতে পারি। যার ফলে আমাদের নিজেদের উন্নতির সুযোগ তৈরি হতে পারে।


৫. জিমে যোগ দেওয়া

স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি ছাড়া যেমন শিক্ষালাভ আমরা চিন্তাই করতে পারি না তেমনি জিম ছাড়াও ব্যায়ামের ব্যাপারটা বেশ দুঃসাধ্য, বিশেষ করে যারা এই ব্যাপারে একদমই নতুন। জিমে যোগ দিলে প্রশিক্ষকের কাছ থেকে ব্যায়াম শেখার সুযোগটা থাকে। প্রতিটা ব্যায়ামের ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে/সঠিক মাত্রায় ব্যায়াম করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি শরীরের অবস্থা অনুসারে ডায়েট/ব্যায়াম কি হবে এই ব্যাপারে জিমের প্রশিক্ষকের উপদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিমে নিয়মিত গেলে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজনের সাথে যোগাযোগ/বন্ধুত্ব হয়, স্বাস্থ্য সচেতন সার্কেল তৈরি হয়। এটা আমাদের সুস্থ থাকার ব্যাপারে আরো অনুপ্রাণিত করবে। জিম নির্বাচনের সময় এমন জিমে যোগ দেওয়া উচিত যেখানে আমরা সহজেই নিয়মিত যেতে পারবো। এটা বাসার কাছেও হতে পারে, অফিসের নিকটেও হতে পারে। অফিসে/কাজে যাওয়ার আগে অথবা দিনের কাজ শেষ করে সুবিধামতো সময়ে আমরা যাতে যাতে যেতে পারি।



৬. কাজের ফাঁকে ফাঁকে শারীরিক পরিশ্রম

আমাদের কাজ/দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা করার ফাঁকে আমরা চাইলেই শারীরিকভাবে সচল থাকতে পারি। ডেস্কে একটানা কাজ করাতে অনেক ঘাড়/পিঠে ব্যাথা হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ঘন্টাখানেক বসে থাকার পর ৫-৬ মিনিটের জন্য একটু হাটাচলা/ঘাড় ও হাত নাড়াচাড়া করলে এই সমস্যা সহজে তৈরি হবে না। অফিস থেকে আসার সময় সপ্তাহে ৩-৪ দিন কয়েক কিমি হেঁটে আসতে পারি। আশেপাশে পায়ে হাটা দূরত্বে যাওয়ার জন্য রিক্সা/গাড়ি ব্যবহার না করে হেঁটে যেতে পারি। লিফট ব্যবহার করার বদলে সিড়ি দিয়ে উঠার অভ্যাস তৈরি করতে পারি। শরীরের গঠন কিন্তু গতিশীল থাকার জন্য, স্থিরভাবে বসে থাকার জন্য নয়। নাড়াচাড়া/শারীরিক পরিশ্রম না করে অলসভাবে বসে থাকলেই বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির হার বাড়তে থাকবে। এভাবে প্রতিদিন অল্প অল্প করে নাড়াচাড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে তা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে।


৭. অন্যান্য

 ব্যায়ামের পাশাপাশি সঠিক ঘুমের অভ্যাস এবং সঠিক ডায়েট ও পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। একটা সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুম অপরিহার্য। বিশেষ করে যারা ব্যায়াম করেন তাদের জন্য ঘুম খুবই দরকারী। ব্যায়ামের ফলে শরীরের যেই বৃদ্ধি ঘটে তা কিন্তু ব্যায়ামের সময়টাতে হয় না বরং ব্যায়ামের পরে ঘুম/বিশ্রামের সময়টাতেই মাসল রিকভার করে। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্টফোন এবং সহজলভ্য ইন্টারনেটের কারনে আমরা অনেকেই রাতজাগা পাখি হয়ে গেছি। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করতে পারলে তা আমাদের সঠিক এবং পর্যাপ্ত ঘুমের জন্যও সহায়ক হবে পাশাপাশি সকালে তাড়াতাড়ি উঠলে দিনের বড় একটা সময় আমরা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবো। ব্যায়াম করে সঠিক সুফল পাওয়ার জন্য খাওয়া-দাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পানের দিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এই বিষয়ে প্রথম পর্বেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।