বয়স কোনো বিষয় নয়, ইচ্ছাতেই হবে জয়

বয়স কোনো বিষয় নয়, ইচ্ছাতেই হবে জয়

আজকে যার কথা লিখছি তিনি আমার জন্য একজন অনুপ্রেরণা,শুধু আমার জন্য নয় যারা ওনাকে জানে তাদের প্রতে্যক-এর জন্য  তিনি একজন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। গল্পটা একজন নারীর, গল্পটা একজন মায়ের,গল্পটা একজন স্ত্রীর যিনি সাধারণ গৃহিণী থেকে হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা,একজন সফল ব্যবসায়ী।

আদ্যোপান্ত একজন গৃহিণী যখন পরিবারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে সামনে এগিয়ে নিতে শত বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে যায়, তাকে আমার অনুপ্রেরণা বলতে ভাবতে হয়না মোটেই । “৬০” কে তিনি শুধু সংখ্যার ঘরেই ফেলে রেখেছে, সেখানে জায়গা নিয়েছে মনের তারুণ্য, সেই তারুণ্য ফুটে উঠে তার কথায়, ব্যবহারে, চলাফেরায় ।

মানুষটি আমার নানু । কিশোরী বয়স থেকে পরিবারকে নিজের দায়িত্ব পালনের জায়গায় রেখে, হঠাৎ যখন উদ্যোক্তা হওয়ার পথটাকেও সমান ভাবে আগলে ধরেন, তখন তার মানসিক শক্তিকে সন্মান জানাতেই হয়।

যিনি  বয়সটাকে এক পাশে সরিয়ে নিজের মনের কিশোরী আগলে রেখেছেন আজও একইভাবে,কিন্তু নিজের আদর্শকে এক মুহূর্তে জন্য ভুলে যান নি। নিজের সন্তানদের করেছেন মানুষের মতো মানুষ।

ষোড়শী সেই বালিকাটি বিয়ের পরেই  পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন,সেই দায়িত্ব তিনি সফলভাবেই পালন করেছেন,করেছেন নিজেকে স্বশিক্ষিত।সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে উঠেন  তিন সন্তানের একজন সফল মা এবং  স্ত্রী। এর মধ্যে হয়তো তার উপর এসেছিল অনেক ধরনের মানসিক ধাক্কা কিন্তু সৃষ্টিকর্তা ও নিজের উপর তিনি কখনো বিশ্বাস হারাননি।

এতো বছর সফলতার সাথে পরিবারের দায়িত্ব পালন করেও তার মনে হয়েছিল হয়তো কিছু অপূর্ণতা রয়ে গেছে তারঁ জীবনে,তাঁর নিজের জন্য কিছু করা হলো না।

তখনই তিনি ঠিক করলেন  নিজের স্বপ্ন গুলোকে  এবার পূরণ করবেন, করবেন নিজের জন্য কিছু। তিনি ধীরে ধীরে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করলেন। সময়টা বেশীদিন আগে নয় ,বছর তিনেক আগে  শাড়ীর উপর পূর্ববর্তী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি চলতে শুরু করলেন একটি নতুন পথে।  শুরুর দিকটা সহজ ছিল না। অনেকেই বলতে লাগলো কিভাবে করবে,এ কাজটা তো সহজ না, কিন্তু আশেপাশের কথায় কখনো কান না দিয়ে তিনি তার ইতিবাচক মনোভাবের প্রতি জোর দিয়েছেন। আর সেই জে্র ধরেই আয়োজন করলেন তার প্রথম শাড়ির প্রদর্শনী। প্রথম প্রদর্শনীতেই লাভ করলেন সফলতা।এরপর  নিজের আয়োজনের  পাশাপাশি একে একে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে লাগলেন। তার  সংগ্রহে থাকা জামদানী ডিজাইন, সবজি কালামকারী, ,হ্যান্ড প্রিন্টেড ডিজাইন মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। শুধু তাই নয়   প্রত্যেকটি শাড়ির  ডিজাইনের পেছনের গল্পগুলো যখন তিনি ব্যক্ত  করেন, তা সত্যি সবাইকে মুগ্ধ করে।

তবে সবসময় সফলতার মুখ দেখেছেন এমনটা নয়,কিন্তু  খারাপ সময়ে তিনি তার কিশোরী মনটাকে সজীব রেখে নিজেকে  নিজে অনুপ্রেরণা দিয়ে চলা শুরু করেছেন নতুন উদ্যোমে।

তিনি যে শুধু সফল ভাবে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছেন,তা কিন্তু নয় বরং এর পাশাপাশি অনেক মানুষের পাশাপাশি এসে দাড়িঁয়েছেন।

আমি কখনো দেখি নি তাকে নিয়মানুবর্তিতার অবহেলা করতে।হোক সেটা সকালবেলার শারিরীক চর্চা থেকে শুরু করে পরিমিত খাবার গ্রহণ। এতো কিছুর মধ্যেও কাজের ফাঁকে তিনি তাঁর নামাজ-এর সময় ঠিক রাখেন। এই সমায়নুবর্তিতা আর নিয়মানুবর্তিতাই তাঁর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।  

এতোক্ষণ যার গল্প বলছিলাম তার নাম তানি মাসুদ।তাঁর তানি মাসুদ থেকে উদ্যোক্তা তানি হওয়ার যাত্রা ছিল এটা।

বর্তমান তরুন সমাজ অধিকাংশ সময়ই নিয়ানুবর্তিতার তোয়াক্কা করে না, কিন্তু নিজেকে চিরকাল তরুণ রাখতে গেলে এর কোনো বিকল্প নেই ।

অনেকেই হতাশায় ডুবে থাকে,কখনো ব্যবসা করতে গিয়ে হাল ছেড়ে দেয় অথবা অনেক নারী ভাবে,বিয়ের  সাথে  সাথেই তার স্ব্প্ন হয়তো শেষ।

কেউ হয়তো বয়সের আগেই নিজের মন টাকে বুড়িয়ে ফেলতে থাকে।

কিন্তু সৃষ্টিকর্তা ও নিজের উপর বিশ্বাস,কাজের প্রতি ভালোবাসা, ইচ্ছা শক্তি,আশেপাশে মানুষের প্র্তি দায়িত্বগুলো মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়।

আমাদের জীবনটা সিন্ডেরেলার গল্প নয়,যে কোনো পরী এসে ইচ্ছেগুলো পূরণ করবে বরং জীবনটা আমাদের হাতে, স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বগুলো আমাদে্রই  এবং তাকে বাস্তব করার জন্য দরকার ইচ্ছে,সাহস এবং পরিশ্রম।


Written By: 

Sayma Sultana Jhara

Campuse Co-ordinator,BYOSD & Careercare

World University of Bangladesh