করোনা ভাইরাসের সময়ে নেতৃত্ব পরিচালনার ৭টি মূলনীতি

করোনা ভাইরাসের সময়ে নেতৃত্ব পরিচালনার ৭টি মূলনীতি

আপনি যদি একজন ম্যানেজার বা লিডার হয়ে থাকেন তবে এ লেখাটি আপনার জন্য। করোনাভাইরাসের এই দূর্যোগের সময় টিকে থাকার জন্য আমি আপনাদের সাথে আমার ‘Seven Cs’ শেয়ার করতে চাই।

1. Calm (ধীরস্থির):

আপনি যদি একজন লিডার হয়ে থাকেন তবে এই কঠিন ও অনিশ্চিত সময়ে আপনাকে ধীরস্থির ও শান্তভাবে কর্ম-পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে। আপনার অধীনস্তরা বিশেষ করে আপনার কর্মীরা, কাস্টমাররা, সাপ্লায়াররা কিন্তু আপনার সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভর করবে এই সময়ে।

2. Confidence (আত্মবিশ্বাস):

আপনাকে শান্ত ও ধীরস্থির হতে হবে, কিন্তু তাই বলে এক গ্লাস পানির মতোন শান্ত নয়। আপনাকে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে এই দূর্যোগে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আপনাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে যাতে আপনার কোম্পানীর ও স্টেকহোল্ডারদের সবচেয়ে কম ক্ষতি হয়। মনে রাখবেন, আপনার লিডারশীপের উপরই স্টেকহোল্ডাররা নির্ভরশীল। তাদেরকে সামনের এই কঠিন দিন ও মাসগুলো অতিক্রম করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই।

3. Communication (যোগাযোগ):

আপনাকে নিরলসভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে, যেতে হবে, যেতে হবে। এই সময়ে অনেক গুজব রটবে আশেপাশে যা পরিস্থিতির জল আরও ঘোলা করে তুলবে। এগুলো এড়িয়ে চলতে কমিউনিকেশনের প্রয়োজন। কিন্তু এই কমিউনিকেশনের জন্য আপনাকে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আপনাকে সিদ্ধান্ত ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই কৌশল তৈরী করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের গঠনব্যবস্থার সাথে জড়িত সকলের সাথেই আপনাকে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে। কয়েক সপ্তাহ তো দূরের কথা, কয়েক দিন বা এমনকি কয়েক ঘন্টাও দেরী করা যাবে না। মনে রাখবেন, এই সময়ে নীরবতা বা চুপচাপ থাকাটাই সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ নীরবতাই গুজব তৈরীর সুযোগ তৈরী করে দেয়। 

4. Collaboration (সহযোগিতা):

আপনার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর না থাকাটাই স্বাভাবিক। কেউ আপনার কাছ থেকে সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবেও না। এখনই সময় আপনার কর্মী ও টিম মেম্বারদেরকে আপনার শক্তিতে পরিণত করার। তাদের সক্ষমতা ও স্কিল অনুসারে তাদেরকে বিভিন্ন টাস্কফোর্স ও সাব-টাস্কফোর্সে ভাগ করে দিন। প্রত্যেকের কাজ নির্দিষ্ট করে দিন যাতে করে প্রত্যেকেই এই ক্রাইসিস অতিক্রম করতে ভূমিকা রাখতে পারে। কর্মীদের কাজে নিয়োজিত করলে গুজব তৈরীর সম্ভাবনা কমে যাবে। তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করুন যাতে তারাই ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে তাদের উপর নির্ভরশীল লোকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

5. Community (সমাজ):

আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমাজে বসবাস করি। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন একটি সমাজের অংশ, তেমনি আমাদের স্কুল-কলেজগুলোও একটি সমাজের অংশ। আমরা কিন্তু শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছি তা নয়, আমাদের নিজেদের সমাজেও নেতৃত্ব দিচ্ছি আমরাই। যেহেতু আমরা একটি সংক্রামক ভাইরাস নিয়ে কথা বলছি, সেহেতু আমাদের উচিত এমন কিছু সমাজবান্ধব ও সহায়ক আচার-আচরণ করা যাতে অন্যদের সামনে সেগুলো উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে পারি।

6. Compassion (সহানুভূতি):

এই সময়ে সহানুভূতিটা খুব বেশি করে দরকার। আমাদের হাতে যদি একদল দক্ষ কর্মী থাকে তাহলে হয়তোবা আমরা এই চলমান অবস্থা থেকে একদিন মুক্তি পেতেও পারি। কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরী যে আমাদের সব কর্মী হয়তোবা এই দূর্যোগে সমান প্রানোচ্ছল নাও হতে পারে। তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কারণটা জানুন। হতে পারে তাদের মধ্যে কারও বাড়িতে বয়ষ্ক বা অসুস্থ পিতা-মাতা আছে। তারা এসময় দ্বিগুন চিন্তিত থাকবে তাদের এই সকল আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে যেহেতু ভাইরাসটা স্বাস্থ্যগতভাবে দূর্বল ও অসুস্থদের বেশি আক্রান্ত করছে। তাদের যদি স্বজনদের দেখাশোনার জন্য সময় বা ছুটির দরকার হয় অথবা তারা যদি বাড়িতে থেকে কাজ করতে চায় তবে তাদেরকে সেই সুযোগটা দিন। ক্রাইসিসের সময় সহানুভূতি লিডারশিপের একটা বড় দিক।

7. Cash (অর্থ):

এই 'Seven Cs’ এর সবচেয়ে কমার্শিয়াল পয়েন্ট হচ্ছে এটি। ক্রাইসিসের সময় অর্থকড়ি আসলেই রাজা বনে যায়। কোম্পানীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে শর্ট টার্ম ও লং টার্ম চিন্তাভাবনা করা উচিত। আপনার কর্মী, কাস্টমার ও সাপ্লাইয়াররা আপনার লিডারশীপের উপর শুধু আবেগের কারণে নির্ভর করছে না। তারা কোম্পানীর আর্থিক অবস্থার ব্যাপারে লং টার্ম চিন্তাভাবনার জন্যও আপনাকে বিবেচনা করছে। এমতাবস্থায়, আপনি যেভাবেই কোম্পানীর অর্থ সঞ্চয় করুন না কেন সেটা সংকটপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারন আপনার অর্থ সঞ্চয়ের পদ্ধতিই নির্ধারণ করবে পরের সপ্তাহে আপনার কর্মীরা বেতন পাবে নাকি পাবে না।

 

লেখক: জন কুয়েলচ,হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন এমেরিটাসের চার্লস এডওয়ার্ড উইলসন প্রফেসর এবং মায়ামি হার্বার্ট বিজনেস স্কুলের সম্মানিত ডিন।