বিল গেটস কিভাবে এতো বই পড়েন?

বিল গেটস কিভাবে এতো বই পড়েন?

বিশ্বের নামকরা কিছু ধনকুবেরের মাঝে মাইক্রোসফট-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস একজন। কী নেই তার জীবনে! এত সফলতা, এত প্রাপ্তি! তবে এত সাফল্যের রহস্য কী জানতে চাইলে বিল গেটসের উত্তর একটাই- বই পড়া। প্রচুর বই পড়তে ভালোবাসেন তিনি। আর তাই তার জীবনে সকল উন্নতির পিছে বই পড়া একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।


২০১৭ সালে টাইমস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক বক্তব্যে বিলগেটস বলেন,
তুমি ততক্ষণ বুড়ো হবে না যতক্ষণ তুমি শিখতে থাকো। প্রত্যেকটি বই–ই আমাকে কিছু না কিছু শিখিয়েছে, নতুন কিছু জানতে সাহায্য করেছে, নয়তো দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সক্ষম হয়েছে।

তাই ছোট থেকে আজ অব্দি তিনি ‘বুক ওয়ার্ম’ই রয়ে গেছেন। বই পড়া তার শুধু অবসর কাটানোর মাধ্যম না, বরং একটি আবেগও বটে। শৈশব থেকে লালন করা বই পড়ার শখ তাকে কখনো একা করেনি, নিয়ে গেছে সফলতার উচ্চ শিখরে।


বিল গেটস বছরে যে প্রায় ৫০টি বই পড়েন এই তথ্যটি অনেকেরই জানা। তাহলে দেখা যায়, সপ্তাহে তিনি একটি করে বই পড়েন। কাজের ফাঁকে, এমনকি কোনো ছুটিতে গেলেও তার সঙ্গী হিসেবে থাকে বই। বিল গেটসের স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস তার স্বামীর এই গুণ সম্পর্কে একটি তথ্য দেন, বিল গেটস নাকি ঘন্টায় গড়ে ১৫০ পাতা পর্যন্ত পড়ে ফেলতে পারেন! শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি যেকোনো সময় নিজেকে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে একাগ্রচিত্তে বই পড়েন। আর কী কী করেন তিনি বই পড়ার ক্ষেত্রে? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিল গেটসের এত বই পড়বার রহস্য নিয়েই!


১) যা শেষ করতে পারব না তা শুরুও করব না   
বইপ্রেমী বিল গেটস হাতের কাছে যা পান তা-ই চট করে পড়ে নেন। কিন্তু যে বই তিনি শেষ করতে পারবেন বলে মনে করেন না, সেই বই তিনি শুরুই করেন না। কারণ অর্ধেক বই পড়ার অভ্যেস তার একদমই নেই। উল্টো যে বইয়ের আলোচ্য বিষয়ের সাথে তিনি একমত হতে পারেন না সেই বিষয়টিতেই তিনি অধিক সময় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন। তাই বিল গেটস বলেন, “আমি আমার প্রিয় বই পড়ার চেয়ে বেশি সময় সেই বইয়ের পেছনেই দেই যা পড়তে আমি বেশি একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।”


২) বইয়ের একপাশে টুকে রাখি 
যেকোনো বই পড়ার সময়ই মনোযোগ দিতে হবে। কিন্তু বিশেষভাবে যদি নন-ফিকশন হয়, যা থেকে আপনি জ্ঞানার্জন করতে যাচ্ছেন, তবে আপনাকে অবশ্যই পূর্ণ মনোযোগ সহকারে বইটি পড়তে হবে। সেই সাথে অবশ্যই ‘নোট’ করতে হবে। অর্থাৎ, কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যে বিষয়টিতে আপনার কিঞ্চিৎ সন্দেহ জাগছে কিংবা যে পয়েন্টগুলো আপনি মনে রাখতে চাইছেন সেগুলো সাথে সাথে টুকে রাখতে হবে। অনেক সময় বিল গেটসের দীর্ঘ সময় লেগে যায় একটি বই শেষ করতে। কেননা এমন বিভিন্ন বিষয়ে তিনি লেখকের সাথে সম্মত হতে পারেন না, এবং এর ফলে নোট নিতে নিতেই সময় চলে যায়। মাঝে মাঝে হতাশও হয়ে পড়েন। তা-ও বইটি শেষ করেন।



৩) কিছুক্ষণ সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু বই, বই আর বই পড়ি!  
বই পড়ার সময় সবদিক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে অন্তত এক ঘন্টা ভালভাবে বই পড়েন গেটস। কেন এক ঘন্টা? কারণ একটা বইয়ের সাথে যুক্ত হতেও একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন। বই কোনো ম্যাগাজিনের আর্টিকেল নয় অথবা ছোট ইউটিউব ভিডিও নয় যা আপনি ৫-১০ মিনিট ব্যয় করলেই হয়ে যাবে। তাই কোনো বই পড়া শুরু করতে চাইলে নীরবে-নিভৃতে-একাগ্রচিত্তে সেই বই পড়তে হবে।



৪) ই–বুক নাকি পেপার বুক? 
ই-বুক এবং পেপার বুক পড়ার ক্ষেত্রে বিল গেটস মাঝে মাঝে ভাবেন তার ডিজিটাল পথটাতেই বদলি হওয়া উচিৎ, “তবে আমি এখনও  পুরোনো রীতিতে বই পড়তে পছন্দ করি কারণ আমি মার্জিনগুলোতে প্রচুর নোট লিখি।” অর্থাৎ নোট টুকে রাখা তার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ একবার ভাবুন! বিল গেটস যখন কোনো লম্বা ছুটিতে যান তখন তিনি সবসময় বইয়ের জন্য একটি বড় ক্যানভাস টোট-ব্যাগ নিয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি যদি কোনো পছন্দের বইয়ের মাঝখানে থাকেন তখন তিনি রাত জেগে সেই বই পড়তেই থাকেন, পড়তেই থাকেন!  অর্থাৎ তার কাছে বই হাতে নিয়ে পড়া, বই সাথে রাখার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়।



তবে তিনি ই-বুক বা পেপার বুক, যে যেটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তার সেটাই পড়া উচিত বলে মনে করেন।

বিল গেটসের মূলত এই চারটি নীতি মেনেই বই পড়ে থাকেন। এছাড়া বইপড়ুয়া বিল গেটসের আছে একটি নিজস্ব ব্লগ । সেখানেও বই নিয়ে একটি আলাদা অংশই আছে। এই বুক ব্লগে তিনি তার পড়া বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ লিখেছেন, কী কী বই পড়া উচিত সেই তালিকা প্রকাশ করেছেন, কোন ছুটিতে কোন বইগুলোকে সঙ্গী করেছেন সেসব কিছু তিনি তার ব্লগে লিখে থাকেন।

করোনা কালীন সময়ে কি পড়ছেন বিলগেটস?
যেমন: করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর এই মহামারীকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে তার ‘বুকব্যাগে’ আছে- টিমোথি সি ওয়াইনগার্ডের ‘দ্য মসকিউটো’, পারদিস সাবেতির ‘আউটব্রেক কালচার’, থমাস জে বলিকির ‘প্লেগ এন্ড দ্য প্যারাডক্স অফ প্রোগ্রেস’, কার্নস গুডউইনের ‘লিডারশিপঃ ইন টারবিউলেন্ট টাইমস’, ডেভিড মিশেলের ‘ক্লাউড এটলাস’সহ নানা বই।


বিল গেটসকে যেকোনো বইপ্রেমীই অনুসরণ করে নিজেদের বই পড়ার অভ্যাসটাকে আরও জোরালো করতে পারে। এছাড়া তার মূলনীতিগুলো মনে রাখলে কিন্তু বই পড়াটা আরও কার্যকর হয়। তাই বিল গেটসের মতো না হলেও, তার কাছাকাছি সফল হতে হলে মনে রাখতে হবে- সফল হতে গেলে জ্ঞানের উৎস বইয়ের কোনো বিকল্প নেই!

সুত্রঃরকমারি ব্লগ