ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত ! কিভাবে নিজেকে আত্নবিশ্বাসী করে তুলবেন।

ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত ! কিভাবে নিজেকে আত্নবিশ্বাসী করে তুলবেন।

ক্যারিয়ার একটা শব্দের মাঝে লুকিয়ে জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত । তাই ছাত্র জীবনে নিজেকে তৈরি করতে হবে এমন ভাবে যাতে পরবর্তিতে ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করতে না হয়। চলুন ক্যারিয়ার নিয়ে ভয় কাটিয়ে উঠার জন্য কিছু উপায় জেনে নেই ।

হেরে যাওয়ার ভয়
নতুন কোনো কাজে নামার আগে বা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমরা হেরে যাওয়ার ভয় পাই। মানুষ স্বভাবসুলভ ভাবেই হারতে ভয় পাই। নতুন কিছু শুরু করার আগেই আমরা চিন্তা করি, যদি ব্যর্থ হই তাহলে কী হবে? যদি মাঝপথে গিয়ে থেমে যেতে হয়? বলা হয় কোন কাজ শেষ করা থেকে শুরু করা অনেক কঠিন।  মাঝপথে থেমে যাওয়া মানেও কিন্তু অর্থেক এগিয়ে যাওয়া। তাই এত চিন্তা-ভাবনা না করি শুরু করুন।

পাছে লোকে কিছু বলে
কেবল লোকে কি বলবে সেটা চিন্তা করতে করতেই আমরা সময় নষ্ট করি। কাজে আর নাম হয় না। এটা কিন্তু মোটেও হেলাফেলার বিষয় না। ইউএসের একটি মেন্টাল হেল্থ সেন্টার বলছে এটা রীতিমতো একটা রোগ! এটাকে বলা হয় ‘Social anxiety disorder’ । আচ্ছা লোকে কি বলবে সেটা যদি আপনিই বলেন তাহলে লোকে কি বলবে? ব্যাপারটা তাদের জন্য রেখে দিন। ঝটপট কাজে নেমে পড়ুন।

 পিছিয়ে পড়ছি নাতো?
ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে গেলে আমরা প্রথমেই সময়ের হিসাব নিয়ে বসি।  কোনো স্কিল ডেভলপমেন্ট বা সময় সাপেক্ষ কোনো কাজে নামতে ভয় পাই। মনে হয়, পিছিয়ে পড়বো। যেভাবে চলছে চলুক না।  ক্যারিয়ারের গ্রাফটা তাই সমন্তরাল গতিতেই আাগাতে থাকে। কোনো খাঁদ  লাফ দিয়ে পার হতে হলে একটু পিছিয়ে এসে লাফ দিতে হয়। থামতে জানলেই অনেকদূর চলতে শেখা যায়।

ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছি?
সবথেকে বড় বোঝাপড়া হয় নিজের সাথেই। নতুন কিছু শুরু করার আগে মনে হয়, ভুল করছি নাতো…। ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সবকিছুই শেষ। এজন্য আত্মবিশ্বাস রাখা প্রয়োজন। নিজের উপর বিশ্বাস আর আস্থা ছাড়া এই ভয় কাটানো সম্ভব না।

ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক
নতুন সিদ্ধান্ত, নতুন কাজ অথবা নতুন প্ল্যান করার আগে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। ক্যারিয়ার নিয়ে ফিয়ারকে নরমাল মনে করুন। ভয়কে যখন ডেইলি রুটিনে নিয়ে আসবেন, দেখবেন বেচারা আপনার ভয়ে পালিয়েছে।

লক্ষ্য ঠিক করুন 
নিজের লক্ষ্যকে সুনির্দিষ্ট করলে ভয় অনেকাংশেই কেটে যায়। বাস্তব ও সময়ভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে মূল লক্ষ্যকে ভেঙে ছোট ছোট লক্ষ্যে বিভক্ত করুন। লক্ষ্যের গুরুত্ব অনুসারে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করুন। সব সময় লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করার অভ্যাস করলে ভয়ের কি সাধ্য আপনাকে থামিয়ে রাখার?

গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল
লক্ষ্য নির্ধারণ করে সঙ্গে সঙ্গে ফল আশা করা যাবে না।  বাস্তবতা ও আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে ফলাফলের সময়। লক্ষ্য ঠিক কিন্তু কাজ নেই। ব্যপারটা গাছে কাঁঠাল আর গোঁফে তেলের মতোন হয়ে যাবে।

ইতিবাচক চিন্তা করুন
পরাজয়ের চিন্তা নয় , করুন ইতিবাচক চিন্তা। আপনি পারবেন।আপনাকে দিয়েই সম্ভব। যারা পারে তারা আপনারই মত। না পারলে কি হবে , আপনার খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে কিনা-তা ভাবতে যাবেন না। নিজেকে বলুন “একবার না পারিলে দেখো শতবার , বলুন হয় আমি জিতবো না হয় আমি শিখবো”। পরাজয় বলে কিছুই নেই।জয়ী আপনি হবেনই যদি লেগে থাকেন , যদি আপনার মাঝে একাগ্রতা থাকে আর অধ্যাবসায় থাকে। তাই নেতিবাচক চিন্তা করে নিজেকে দমিয়ে দিবেন না , ভাবুন আমি পারবো , আমার দ্বারা হবে। নিজেকে বলুন আমি আমার শত ভাগ দিয়ে আসবো তারপর ও যদি পরাজয় আসে তাহলে আমি মেনে নিব এবং আমার ভুলগুলো শুধরে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ব।এইভাবে ইতিবাচক চিন্তা করুন, আপনার ভেতরের ভয় বাসা বাধতে পারবে না ।

আত্মবিশ্বাসকে পোক্ত করুন
ধরুন হঠাৎ যদি মনে হয় যে জীবন আপনি পার করছেন তা যথেষ্ট ভালো নয়, তাহলো একটি সঠিক তালিকাই আপনাকে সে পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে। আপনি আপনার ছোট বড় সব অর্জনগুলো তালিকায় তুলে ফেলুন। দেখবেন সত্যিই কি দারুণ সময় গেছে আপনার। মানুষ  আত্মবিশ্বাস নিয়েই সমস্যায় ভোগে।

তাই তালিকাটি করুন সেটি যে ধরণের সাফল্যই হোকনা কেন। এরপর দেখুন নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস আরও কিভাবে বাড়ে।

ভয়কে লিখে ফেলুন 
যদি কোনো ভাবেই ভয়কে ঠেকাতে না পারেন তাহলে আপনার মাথায় আশা অহেতুক ভয়গুলোকে লিখে ফেলুন। কি হবে , না হবে সব কিছু।এর পর যা লিখেছেন তা দেখুন।দেখবেন ভয়টা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাচ্ছে , দেখবেন আপনার মস্তিষ্ক তখন নিজেই বলে উঠছে- অহেতুক ভয়। এর পর যে কাগজটিতে লিখেছেন সেই কাগজটি ছুড়ে ফেলে দিন।আর ভাবুন , আপনার ভেতরের জমে থাকা ভয়গুলো কাগজটার সাথে সাথে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন।

আগ্রহ হারানো চলবে না
কোন একটা কাজ শুরু করা অনেক বেশি কঠিন। শুরু করার পর আগ্রহ ধরে রাখতে পারা তো আরো কঠিন। আগ্রহ ধরে রাখার জন্য সবার আগে যা দরকার, সঠিক প্ল্যান। সঠিক টাইমলাইন।  আগ্রহ ধরে রাখার একটা ভালো উপায় হচ্ছে লাইফ থেকে ডিস্ট্রাকশন বা নয়েজ গুলো সরিয়ে ফেলা। কি কি আপনাকে আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করতে বাধা দেয় বা আপনার সময় গুলো নষ্ট করে, তা খুঁজে বের করা।

বাস্তববাদী হন
যে কোনো ঘটনা বা ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় আমরা অনেকে অযথা উৎকণ্ঠিত  হয়ে পড়ি। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলেটেনশন এবং ভয় কমে যাবে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে।

রাকিবের কবিতা পড়া এতক্ষণে শেষ বোধহয়। আমরাও এখানে শেষ করে ফেলি কথা। ক্যারিয়ার নিয়ে ভয় হবেই।   দুশ্চিন্তা ভর করবেই। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে কাজে নেমে পড়ুন। কোথায় যেন পড়েছিলাম, ‘সফলতা যদি আপনার দরজায় কড়া না নাড়ে, তাহলে আপনার উচিত  সফলতার দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ানো।’