
অভিবাবকের সৃজনশীলতা সন্তানের সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে সহায়ক।
শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য তাকে সৃজনশীল উপায়ে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আবার, সৃজনশীলতাও গড়ে নেয়া যায়। এটি একটি চর্চার বিষয়। শিশুর কোমল মনে কালো অন্ধকার ছোঁয়া লাগার আগেই সুন্দর কল্পনায় আর সৃজনশীলতায় তার মন পূর্ণ করে দিতে পারলে বাকি কাজ এমনিই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা কিভাবে করা যায়?
১। নির্দিষ্ট রুটিনে আবদ্ধ নয়– আমাদের সমাজটা খুব সৃজনবান্ধব না। স্কুল, কোচিং সবখানেই সেই চেনা গৎ। এসো, শেখো, মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উগরে দাও। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্যে এটা মোটেও সহায়ক নয়। শিশুকে পাঠ্যবইয়ের বৈজ্ঞানিক থিওরি মুখস্থ না করিয়ে তার হাতে বিজ্ঞানবাক্স তুলে দিন। দেখবেন, সেই একই থিওরির এক্সপেরিমেন্ট সে করে ফেলেছে নিজের অজান্তেই।
২। বিনোদন-এমনিতেই দিনদিন সংকুচিত হয়ে আসছে শিশুদের বিনোদনের স্থানগুলো। ভরাট হয়ে যাচ্ছে মাঠ, উঠছে হাইরাইজ বিল্ডিং। এমন নিগড়বদ্ধ জীবনে তাকে একটু খোলা বাতাস, একটু নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিন। মুক্তি দিন কঠিন রুটিন থেকে। অন্তত পরীক্ষা শেষে ছুটিটা উপভোগ করতে দিন তাকে। কিছু সময় সে নিজের মত কাটাক না!
৩। তিরষ্কার কম পুরষ্কার বেশি– সে কোনো ভালো কাজ করলে তাকে বাহবা দিন, অনুপ্রেরণা যোগান, সম্ভব হলে তার মনের মত বই, রং পেন্সিল কিংবা বিজ্ঞানবাক্স পুরস্কার দিতে পারেন। এতে সে উৎসাহী হবে। তবে এই উৎসাহটাও দিতে হবে মাত্রা মেপে। একই কাজের জন্যে বারবার পুরষ্কৃত করলে তার কর্মবৈচিত্র্য কমে যাবে। বিচিত্র এবং বিভিন্নরকম কাজ করতে উৎসাহিত করুন তাকে
৪। বয়স বুঝে সমালোচনা– ভালো কাজের জন্য অতি প্রশংসা করা যেমন ভালো না, তেমনি শিশু কোনো ভুল করে ফেললে অতিরিক্ত সমালোচনা করাও উচিত না। এতে শিশুর মন ভেঙে যাবে, আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। সন্তানের ধারণক্ষমতা ও বয়সের চাহিদা বুঝে সমালোচনা করলে সেটার আউটপুট ভালো হবে।
৫। শাস্তির ভয় না দেখানো– “পরীক্ষায় ভালো না করলে তোমাকে গ্রামে রেখে আসবো” অথবা “ঠিকমত পড়াশোনা না করলে তুমি বড় হলে রিকশা চালাবে” এই জাতীয় হুমকি দেখানো থেকে বিরত থাকুন। এতে শিশুমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে তার নিজের কাজ সম্পর্কে ভীতি তৈরি হবে। সে কাজকে ভালোবাসতে পারবে না।
৬। প্রতিযোগিতা চাপিয়ে দেয়া নয়– বর্তমান সময়টাই প্রতিযোগিতার। ঘাটে, মাঠে, অফিসে, আদালতে, সবখানেই প্রতিযোগিতা। এমনকি শিশুরাও এটা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ভালো স্কুলে ভর্তি হতে হবে, ভালো রেজাল্ট করতে হবে, এমন নানারকম বাধ্যবাধকতা । এসব শিশুমনে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলাফল ভালো হবার তেমন সম্ভাবনা নেই।
৭। অতি নজরদারি না করা– শিশুকে অবশ্যই নজরদারিতে রাখা উচিত। কিন্তু সেটা হবে এমন, যেন সে বুঝতে না পারে। শিশু যদি মনে করে, সবসময় তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে, তাহলে তার উপর মানসিক চাপের সৃষ্টি হবে, যা তার স্বাভাবিক সৃজনশীলতাকে ব্যাহত করবে।
৮। প্রযুক্তি নির্ভরতা কমানো– প্রযুক্তির প্রতি অতি নির্ভরতা শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা।এর ফলে দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে কত হয়, এই অংক করতেও তার ক্যালকুলেটর লাগে।নিজের ক্ষমতা এবং দক্ষতার প্রতি সংশয় জন্ম নেয় এবং তার চিন্তা ভাবনায় কোনো স্বকীয়তা থাকে না। সে হয়ে ওঠে যন্ত্রনির্ভর।
শিশুকে সৃজনশীল করতে তাকে কল্পনাপ্রিয় করে তুলুন। উৎসাহী করতে পারেন ডায়েরি লিখতে, হতে পারে তা কবিতা বা গল্প, হতে পারে মজার কোনো ঘটনা। এছাড়া বিভিন্ন সায়েন্স ফেয়ারে প্রজেক্ট তৈরি করতে দিন, এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে বিজ্ঞানবাক্স কিংবা মনের মতো ছবি আঁকতে তুলে দিন রং পেন্সিল। হয়তো ঘরের দেয়ালেই এঁকে নিলো কল্পনায় থাকা গল্পগুলো।
সুত্রঃ রকমারি ব্লগ