
উদ্যোক্তাদের জন্য সুখবর স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা হন
এবার ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে শিল্পোউদ্যোক্তাদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ তহবিল গঠন করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কম সুদে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণের জোগান দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ কোটি ইউরোর নতুন তহবিল গঠন করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এ তহবিল থেকে শুধু উৎপাদন ও রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাবেন। ঋণের মেয়াদ হবে ৫ থেকে ১০ বছর। সুদের হার হবে ২ থেকে ৩ শতাংশ।এ ঋণের অর্থ চলমান কারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানায় রূপান্তর (ক্রেতাদের শর্ত অনুযায়ী কমপ্লায়েন্স) করা যাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে সার্কুলারটি পাঠানো হয়েছে। নতুন তহবিল থেকে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউরোতে এ তহবিল গঠনের ফলে ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে পণ্য আমদানির খরচ কমবে। এতে এলসির মূল্য ডলার থেকে ইউরোতে স্থানান্তর করতে হবে না। ফলে ক্রস কারেন্সি বা এক মুদ্রা থেকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তরের ফলে বাড়তি কোনো ফি দিতে হবে না। ফলে উদ্যোক্তাদের খরচ কমে যাবে। ফলে দেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
সার্কুলারে বলা হয়, এ তহবিল থেকে উৎপাদন ও রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনসহ কারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরিতে রূপান্তর করতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করতে পারবেন। এ তহবিল থেকে ঋণ নিলে ব্যাংকগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ আরোপ করে ইউরো অঞ্চলের আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (ইউরো লাইবর) সঙ্গে ১ শতাংশ সুদ যোগ করে।
বর্তমানে করোনার ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে ইউরো অঞ্চলে অর্থের চলাচল নেই বললেই চলে। এ কারণে ইউরো লাইবর রেট এখন নেগেটিভ বা শূন্য শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এ তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার দাঁড়াবে ১ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ সুদের হারের সঙ্গে তারা আরও ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নিতে পারবে।
সব মিলে উদ্যোক্তা পর্যায়ে ঋণের সুদ হার দাঁড়াবে ২ থেকে ৩ শতাংশ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইউরো লাইবর রেট বাড়লে সুদের হারও কিছুটা বাড়তে পারে। ৬ মাস মেয়াদি ইউরো লাইবর রেট সাধারত দেড় শতাংশের মধ্যে উঠানামা করে। বর্তমানে এসব খাতের পণ্য আমদানির জন্য ২০ কোটি ডলারের একটি সবুজে রূপান্তর তহবিল রয়েছে।
এ তহবিল থেকেও উৎপাদন ও রফতানিকারকরা ডলারে ঋণ নিতে পারেন। এর পাশাপাশি ইউরোতে ওই ফান্ড গঠনের ফলে ইউরোতে এলসি খোলার সুযোগ বাড়বে। ব্যাংকগুলোতে ইউরোর সরবরাহ কম বলে বেশিরভাগ এলসিই ডলারে খুলতে হয়।
দুটি তহবিল মিলে এখন বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়ার জন্য তহবিলের পরিমাণ ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। নতুন করে বাজারে ২০ কোটি ইউরোর তহবিল আসার ফলে একদিকে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে। একই সঙ্গে বাজারে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২০ শতাংশ ইউরো অঞ্চল থেকে হয়ে থাকে।
সূত্র জানায়, এটি হবে একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল। এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের পুনঃঅর্থায়নও করা যাবে। অন্যান্য বৈদেশিক ঋণের সঙ্গেও এ তহবিল ব্যবহার করা যাবে। বর্তমানে গ্রিন ফ্যাক্টরির চাহিদা বাড়ছে। করোনার পরে রফতানি বাজার ধরতে উদ্যোক্তারা যাতে এখনই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেন সেজন্য এ তহবিল গঠন করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর